নওগাঁয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়নের ঘর পাল্টে দিয়েছে ভূমিহীনদের জীবনের গল্প

নওগাঁয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়নের ঘর পাল্টে দিয়েছে ভূমিহীনদের জীবনের গল্প

বিকাশ চন্দ্র প্রাং, স্টাফ রিপোর্টার:

 

নওগাঁয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাল্টে দিয়েছে দুইশতাধিক ভূমিহীনদের জীবনের গল্প। এই ঘর অনেকেরই জীবন পরিবর্তনের প্রধান অনুপ্রেরনা হিসেবে কাজ করছে। মাথার গোঁজার নিজস্ব ঠিকানা পেয়ে অনেকেই অনেক কিছু করে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি বদলে ফেলছেন জীবন পরিবর্তনের গল্প।

সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নিজস্ব তহবিল থেকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে দেশের গৃহহীন ও ভূমিহীন লাখ লাখ মানুষের জন্য ২শতাংশ সরকারি জমির উপর সেমিপাঁকা ঘর নির্মাণ করে উপহার দিচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২০২০সালে মুজিববর্ষে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় ফেজে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১২০টি ঘর নির্মাণ করে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। স্বপ্নের মতো পাওয়া সেই সব ঘরে বসবাস করে অনেকেই তাদের জীবন পরিবর্তনের গল্প আবার নতুন করে শুরু করেছেন। আর ৩য় ফেজে নতুন করে বরাদ্দ পাওয়া ৯০টি ঘর নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।

সদর উপজেলার ০৫নং হাপানিয়া ইউনিয়নে আবাদপুর এলাকার মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে গৃহহীন ও ভ্থমিহীনদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের ২৩নং ঘরের বাসিন্দা আছমা বেগম। এই এলাকায় ৬৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষরা মাথা গোঁজার নিজস্ব ঠাঁই পেয়েছেন। আর এখানে গড়ে উঠেছে ছিম-ছাম ও মনোরম একটি আশ্রয়ন পল্লী। আর সেই পল্লীরই একজন বাসিন্দা আছমা। আছমার স্বামী পৈত্রিক ভাবে সহায়-সম্বলহীন আজম মন্ডল ঘরে টিন লাগানোর কাজ করেন। পূর্বে তারা একই ইউনিয়নের কুমোড়িয়া নামক স্থানে সরকারি একটি জায়গায় ঝুপড়ি ঘর করে সন্তানদের নিয়ে কোন মতে বসবাস করতেন। বর্তমানে আছমা বেগমের পরিবারে স্বামী আজম মন্ডল আর ৪ছেলে ও ১মেয়ে আছে। বড় ছেলেরা দিনমজুরের কাজ করে। তারা এখন অন্যত্র বসবাস করে। আছমা বর্তমানে স্বামীসহ ছোট ছেলে ও ছোট মেয়েকে নিয়ে আশ্রয়নের ঘরে সুখে ও শান্তিতে বাস করছেন। পাশাপাশি তিনি তার ঘরের বারান্দায় চায়ের ও অল্প পরিসরে মুদিখানার দোকান দিয়ে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আগে বছরের অধিকাংশ সময় স্বামীর কাজ হতো না। তাই সন্তানদের নিয়ে অধিকাংশ দিনই অর্ধাহারে-অনাহারে দিনকাটাতে হতো আছমা বেগমকে। আছমা নিজেও সংসারের অভাব মোচনের জন্য অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেছেন। এরপর বছরখানেক আগে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে নিজেই কিছু একটা করবেন বলে মানুষের কাছ থেকে অর্থ ধার নিয়ে সেখানে আশ্রয়নের ঘরের সঙ্গে গড়ে তোলেন চা ও মুদিখানার দোকান। বর্তমানে আশ্রয়নের বাসিন্দাদের কাছে চা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে স্বাচ্ছন্দেই চলছে তার পরিবার। প্রতিদিন আছমা বেগম তার আশ্রয়নের দোকান থেকে ৬-৭শত টাকা বিক্রি করে লাভ করছেন ২শত থেকে ২৫০টাকা। বর্তমানে আছমা আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আর স্বপ্ন দেখছেন তার সন্তানদেরও আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করার। আছমা বেগম কখনোই ভাবেননি যে ইট বিছানো রাস্তাসহ এমন একটি সেমিপাঁকা ঘর ও জমির মালিক হবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন উপহার তার জীবনকে পাল্টে দিয়েছে। বর্তমানে আছমা ওই আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের কাছে মডেল। ওই আশ্রয়নের অনেকেই এখন আছমা বেগমকে অনুসরন করে কেউ হাঁস, কেউবা মুরগী কিংবা কেউ ছাগল পালন করে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়নের ঘরই পাল্টে দিয়েছে আছমা বেগমের জীবন।

আরেক ভূমিহীন ষাটোর্ধ মগর আলী। তিনি সদর উপজেলার ০৯নং চন্ডিপুর ইউনিয়নে দুদুর মোড়ের আশ্রয়ন প্রকল্পের ১০নং ঘরের বাসিন্দা। আদিবাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়। পৈতিক ভাবে কিছু না থাকায় জীবিকার তাগিদে প্রায় ৫০বছর আগে স্ত্রীসহ সন্তানদের নিয়ে দিনাজপুরের চিলাহাটি এলাকায় চলে আসেন। শরীরে যখন শক্তি ছিলো তখন মানুষের দিনমজুরী কাজ করে মানুষের বাড়ির উঠানে কিংবা বারান্দায় কিংবা পরিত্যক্ত জায়গায় একটি ঝুপড়ি ঘর করে জীবন-যাপন করতো। এরপর প্রায় ৩০বছর আগে জীবিকার তাগিদে মগর আলী নওগাঁয় চলে আসেন। দিনমজুর এই বৃদ্ধার ভাগ্যে কখনই কোন বাড়ি জোটেনি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানুষের বাড়ির বারান্দায় এরপর সদর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় কেটেছে কয়েক দশক। শরীরের শক্তি হারিয়ে যাওয়ায় মগর আলী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত স্ত্রীসহ ভিক্ষাবৃত্তি পেশা বেছে নেন। বর্তমানে ৫মেয়ের মধ্যে ৩মেয়ের স্বামী মরে যাওয়ায় আজ তারা মানুষের বাড়িতে কাজ করে কোন মতে জীবন-যাপন করছে। একমাত্র ছেলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েও জীবন চলার তাগিদে বর্তমানে ঢাকা শহরে রিক্সা চালিয়ে কোন মতে বেঁচে আছে। বর্তমানে মগর আলী নওগাঁ শহরে ভিক্ষা করে দিন শেষে যা আয় হয় তা দিয়েই চলছে তাদের জীবন। আগে মগর আলীর মাথা গোঁজার মতো কোন ঠাঁই ছিলো না কিন্তু বর্তমানে মগর আলী প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া সেমিপাঁকা ঘরসহ ২শতাংশ জমির মালিক। দিনশেষে রাতে মাথার গোঁজার নিজস্ব বাড়িতে এসে শান্তিতে ঘুমাতে পারছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপহার জমিসহ ঘর পেয়ে মগর আলী এখন অনেক সুখি।

সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের ঘুড়ে দাঁড়ানোর লক্ষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল সবজির বীজ, চারা, গবাদিপশুসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। আমি আশাবাদি এই মানুষগুলো নিজেদের স্থায়ী বাসস্থানে বসবাসের পাশাপাশি সৃজনশীল কর্মের মাধ্যমে নিজেদের জীবনের ফেলে আসা দু:খ্যময় গল্পকে পরিবর্তন করে নতুন জীবনের গল্প লেখা শুরু করতে পারবেন। অনেকেই বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারই এই সব মানুষের জীবনের বড় অনুপ্রেরনা। ৩য় ফেজের ৭১টি ঘর বর্ষাইল ইউনিয়নের আদিবাসী পল্লীতে নির্মাণের সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এই ঘরগুলো নির্মিত হলে ওই আদিবাসীরা জরাজীর্ন জীবন থেকে একটি ছিমছাম ও সাজানো জীন ফিরে পাবে বলে আমি আমঅবাদি। এছাড়াও সরকারের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সময় আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য আগ্রহী বাসিন্দাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করার পাশাপাশি নতুন করে জীবনে ঘুরে দঁাড়ানোর লক্ষ্যে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত রাখা হবে।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন